মোরশেদ রিমন, ( ফটিকছড়ি )
উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সাধক, ‘মাইজভাণ্ডারী তরিকার’ প্রবর্তক গাউসুল আজম হযরত শাহসুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র ১১৭তম ওরস শরিফ উপলক্ষে গাউসিয়া হক মঞ্জিলের ব্যবস্থাপনা তাযকেরা-এ-চেরাগে উম্মতে আহমদী (দ.) মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গত ১৫ জানুয়ারী রবিবার মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ শাহী ময়দানে গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র রক্ত ও বেলায়তের উত্তরাধিকার, এসজেডএইচএম ট্রাস্টের মাননীয় ম্যানেজিং ট্রাস্টি ও দরবারে গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র গাউসিয়া হক মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন, রাহবারে আলম, শাহ্সুফি সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী (ম.)’র সদারতে এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

রাহবারে আলম সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী (ম.)’র আশীষ বাণীতে বলেন, আউলিয়ায়ে কেরামগণ তাদের ভক্ত অনুরক্তদের ডাকেন আল্লাহর পথে, আল্লাহর দিকে, শিক্ষা দেন তৌহিদের, দর্শন করান আল্লামুখী রাস্তার, কিন্তু সে ভক্তিমুখী, ভাবমুখী, প্রেমমুখী অবস্থানকে অপবাদ দেওয়া হয় পীর পূজা, শিরক বেদআত চর্চা হিসেবে (নাউযুবিল্লাহ)। এছাড়াও তিনি আউলিয়ায়ে কেরামের মাজার ভিত্তিক যে কর্মসূচি রয়েছে তা নাটক সিনেমার মধ্যে ভুল ভাবে উপস্থাপনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং আরো উল্লেখ করেছেন একাজে কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রুপের সম্পৃক্ততার কথা।

একাজে যারা নিয়োজিত তাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন- যারা মাজার সংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করতে চাই, তারা আসলে মূল ইসলামের সংস্কৃতিকেই বিলুপ্ত করতে চাই। ইসলামের শিক্ষাকে বিলুপ্ত করতে চাই। মুসলিমদের ভবিষ্যতের পথ রূদ্ধ করতে চাই। কারণ তাসাউফ ইসলামই হচ্ছে বিশ্ব মুসলিমের পথরেখা নির্ণয়ের প্রধানতম হাতিয়ার”। তাসাউফ না থাকলে মুসলমানদের সারাক্ষণ পারস্পরিক সংঘাত, বিরোধের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাবে। তাসাউফের যে কার্যক্রম রয়েছে তা তৌহিদের অনুকূলে কর্মসূচি, তৌহিদের বিমুখী কর্মসূচি নয়। তাই এ দর্শন ব্যাপকভাবে মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

মাজার শরিফ থেকে আরো সামাজিক, মানবিক, বুদ্ধিভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেছেন- মুসলিম উম্মাহ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। আমরা বিচারের জায়গা থেকে সরে গিয়েছি। আমরা যা ইচ্ছা করছি, নিজের স্বার্থে বিচার করা শিখে গেছি। আমি যখন সব ব্যাপারে শুধু নিজের স্বার্থে বিচার করব, আমি তখন কোন ভাল বিচার করতে পারব না। ভাল সিদ্ধান্ত দিতে পারবনা, সবার উপকারে আসে এমন সিদ্ধান্তে আমি পৌছাতে পারব না। তখন আমি আমার মুরব্বিআনার জায়গা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সরে যেতে হবে। দুভার্গ্যবসত এটি আমরা দেখেছি আমাদের আন্ত:ধর্মীয় সম্পর্কের মধ্যে তার পরে অন্তধর্মের মধ্যেও। অর্থাৎ ইসলামের মধ্যে যে নানান গ্রুপগুলো আছে তাদের মধ্যেও দেখেছি যেখানে একজন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলমানের রক্ত হারাম সেখানে আমরা দেখেছি যে ইয়েমেনে মুসলিমরাই মুসলিমদের রক্ত নিয়েছে এবং নিচ্ছে। ইরাকে যে আমেরিকার মেম্বারগুলো বোমবেগ করেছে সে বিমানগুলো কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্র থেকে উড়ে গেছে। সেখান থেকে তেল রিফুয়েরিং করেছে। কাজে কাজে আমাদের মধ্যে পারস্পরিক অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান হওয়া দরকার। বিচার আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হাতে। আমরা প্রচার করব আমাদের বুঝ ব্যবস্থা অনুযায়ী। কিন্তু সব বিচার যেন আমরা পৃথিবীতেই করে যেতে চাই। আখেরাতের জন্য আমরা কোন বিচার রেখে যেতে চাইনা। এই পরিস্থিতি এই মানসিকতা আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। আরেকটি আধ্যাত্মিক ধর্ম, কিন্তু এখন এমন অবস্থা হয়েছে ইসলাম ইকুয়াল রাজনীতি।

ইসলামে একটি সামাজিক নীতিমালা রয়েছে। এর রাজনৈতিক একটি গাউড লাইনও রয়েছে। মুসলিম কিভাবে তাদের রাজনৈতিক জীবন পরিচালনা করবে। ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেখানে রাজনীতি থেকে তাৎপর্যপূর্ণ আরো বেশি কিছু রয়েছে। ইসলাম মানুষের আধ্যাত্মিক দৈন্যতা নিরসণ করে আধ্যাত্মিক পূর্ণতা প্রদানের জন্য এসেছে, মানবিক চেতনা হলো বিকাশের জন্য এসেছে। “উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনা থেকে চিন্তাযুক্ত আলোচনা বেশি প্রয়োজন। ভারসাম্যপূর্ণ সমাজে যাতে ব্যক্তিক ও সামষ্টিভাবে সাম্যপূর্ণ সমাজ গঠন করা যায় তার নীতিমালা নিয়ে এসেছে ইসলাম। কিন্তু রাজনীতির স্বভাব হচ্ছে প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করা। আমরাও এর অনেকখানী স্বীকার হয়ে গিয়েছি।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের অবশ্যই বেলায়তে মোতলাকা কিতাবের আদলে তৌহিদে আদইয়ানের ভিত্তিতে সমাজ নির্মাণ করতে হবে।” এছাড়াও তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাইজভান্ডারী সুফি কবি রমেশ শীলের জীবনী জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে অর্ন্তভুক্ত করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান এবং গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (ক.)’র জীবনীও পাঠ্যপুস্তকে অর্ন্তভুক্ত করার অনুরোধ রেখে বক্তব্য শেষ করেন। আলোচনা করেন মাওলানা আবু তাহের ,হাফেজ মাওলানা হাফেজ আবুল কালাম, মাওলানা বশিরুল আলম, মাওলানা মুজিবুল হক , মাওলানা সেলিম উল্লাহ।

মাওলানা নাজিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় মিলাদ কিয়াম পরিবেশন করেন শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র রওজা শরীফের খাদেম তাজুল ইসলাম। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি কেন্দ্রীয় পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, গাউসিয়া হক মঞ্জিলের কর্মকর্তাগণ,রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গগণ, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গগণ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ বিভিন্ন শাখা সমূহের সদস্যবৃন্দ ও আশেক-ভক্তবৃন্দ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here