বাংলাদেশের প্রত্যেকেই এক একজন ‘নোবেল’ অভিহিত করে জি-বাংলার রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’তে ‘দেখিয়ে দিয়ে’ সবার দোয়া আর ভালোবাসায় সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বললেন তরুণ সংগীতশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেল।
প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে নোবেলের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন অবন্তি সিঁথি, তানজীম শরীফ, রোমানা ইতি, মেজবা বাপ্পী, আতিয়া আনিসা, মন্টি সিনহা। বাকিরা প্রতিযোগিতার নানা ধাপে ছিটকে গেলেও নোবেল টিকে ছিলেন শেষ পর্যন্ত।
রোববার গ্রান্ড ফিনালেতে যৌথভাবে দ্বিতীয় রানারআপ হয়ে নয় মাসের লড়াইয়ের ইতি টানলেন গোপালগঞ্জের এই তরুণ।
দুই বাংলায় জনপ্রিয় এ প্রতিযোগিতায় বিচারকদের রায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণার মেয়ে অঙ্কিতা ভট্টাচার্য, যৌথভাবে প্রথম রানারআপ হয়েছেন গৌরব ও স্নিগ্ধজিৎ। নোবেলের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছেন প্রীতম।
আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণার পর রোববার রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নোবেল বলেন, “সা রে গা মা পা আমার জন্য একটা দীর্ঘ জার্নি। এই জার্নিতে আমি অনেক কিছু শিখেছি, জেনেছি; ভক্তসহ সবার ভালোবাসা পেয়েছি। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।”
ফল ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। প্রতিযোগিতার বিচারকদের রায় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কারও কারও দাবি, বাংলাদেশের এ শিল্পীকে যথাযথ মূ্ল্যায়ন করা হয়নি।
তবে ‘বিচার প্রক্রিয়া’ কিংবা ‘রানারআপ’ হওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি শিল্পী।
নোবেল বলেন, “শুধু বলব, আমরা বাংলাদেশের সবাই একেকটা নোবেল। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি। তাই আমরা সবাই চ্যাম্পিয়ন। সবার ভালোবাসা ও দোয়া নিয়ে সামনে পথ চলতে চাই।”
‘সা রে গা মা পা’তে অংশ নিয়ে পরিচিত পাওয়া এ তরুণ শিল্পী নিজের গায়কী দিয়ে হৃদয় ছুঁয়েছেন ভক্তদের।
প্রতিযোগিতায় পরিবেশিত গানগুলো নিয়ে আলোচনার পাদপ্রদীপে থাকা এ শিল্পী রোববার প্রচারিত চূড়ান্ত পর্বে নোবেলের সঙ্গে ‘সেই তুমি’ গানে তার সঙ্গে কণ্ঠ মেলান কলকাতার সংগীতশিল্পী অনুপম রায়। এরপর নোবেল পরিবেশন করেন ‘বাংলায় গান গান গাই’ ও ‘বাংলাদেশ’।
‘বাংলাদেশ’ গানের গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদ অনুষ্ঠানে প্রচারিত একটি ভিডিও বার্তায় নোবেলের জন্য শুভকামনা জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ থেকে নোবেলের অংশগ্রহণ অবশ্যই ‘সা রে গা মা পা’কে একটা ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। বেশ ভালো লাগছে। আমরা যদিও দুই বাংলা বলি, বাংলাটা তো একটাই। নোবেলের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।”
গ্রান্ড ফিনালেতে উপস্থিত ছিলেন নোবেলের বাবা মোস্তাফিজার হোসাইন নান্নু ও তার ব্যান্ড ‘নোবেলম্যান’র সদস্যরা।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন অভিনেতা যীশু সেনগুপ্ত। পুরো আয়োজনে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন শ্রীকান্ত আচার্য, শান্তনু মৈত্র, কৌশিকী চক্রবর্তী, মোনালী ঠাকুর ও পণ্ডিত তন্ময় বোস।
ভারতের অন্যতম পুরোনো এ রিয়েলিটি শো শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। দেশটির জি নেটওয়ার্কের টিভি চ্যানেলের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে আলাদা আলাদা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে জি বাংলার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ও ভারতের নির্বাচিত ৪৮ জন এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
প্রতিযোগিতাটির গ্রুমিংয়ে প্রায় নয় মাসের বেশি সময় কাটিয়ে মাসখানেক আগে দেশে ফিরেছেন নোবেল।
গ্রুমিং থেকে ‘নিয়মানুবর্তিতা’ শেখার কথা বলেন তিনি।
“আমি বলব, ৫ ভাগ হলেও আমার পাঙ্কচুয়ালিটির উন্নতি হয়েছে। ঢাকায় থাকতে আমি পাঙ্কচুয়ালিটি মেইনটেইন করতে পারতাম না। তার কিছুটা হয়তো উন্নতি হয়েছে।”
মৌলিক গানে ভক্তদের হৃদয়ে নাড়া দিতে ‘সা রে গা মা পা’র পাট চুকানোর আগেই ‘নোবেলম্যান’ গঠন করেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গানের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
“ইতোমধ্যে টুকটাক ব্যান্ডের কম্পোজিশন শুরু করেছি। দলের সবাই সিনিয়র মিউজিশিয়ান। নিজেদের মতো করে কম্পোজিশন করতে চায়। আশা করি, এখান থেকে ১০টা ভালো গান ছাড়লে মানুষের কাছে পৌঁছাবে।”
পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গানেও ব্যস্ততা বেড়েছে তার। কলকাতার নির্মাতা সৃজিত মুখার্জির ‘ভিঞ্চি দা’ চলচ্চিত্রে গান করেছেন; সম্প্রতি বাংলাদেশের ‘শান’ চলচ্চিত্রেও গেয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন স্টেজ শো করছেন।
গায়কীতে তিনি আদর্শ মানেন আজম খান, আইয়ুব বাচ্চু, হাসানকে আর গান লেখায় প্রিন্স মাহমুদকে। জিম মরিসন, পিঙ্ক ফ্লয়েড, নির্ভানার গান ভালো লাগে বলে জানান তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম