বিভাগের সম্পাদক : জনাব মাওলানা কাজী সৈয়দ আছাদ আলী (রহ.) ১৮৫১ ঈসায়ী সালে এ ধরাধামে ভুমিষ্ট হন। তাঁর পিতার নাম মাওলানা সৈয়দ সফর আলী শাহ (রহ.)। বংশ পরম্পরায় আছাদ আলী শাহ কেবলা শেখ মুহাম্মদ ঘোরীর অধঃস্থন বংশধর এবং আউলাদে রাসূল (দ.)। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করেন আপন পিতার কাছে। অতঃপর তিনি উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার জন্য হিন্দুস্থান সফর করেন এবং ঐতিহাসিক আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সাথে সাথে বিভিন্ন আলেম ওলামা ও শায়খ থেকে ইলমে শরীয়তের বিবিধ বিষয়ে বুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি ইলমে তাফসীর, ইলমে ফিকাহ এবং ফার্সি ভাষার ওপর বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন।
জনাব কাজী সৈয়দ আছাদ আলী কেবলা আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনের পর উচ্চতর দ্বীনি শিক্ষা হাসিলের লক্ষ্যে এবং জগদ্বিখ্যাত ওলামায়ে কেরামের সান্নিধ্য লাভের জন্য কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় গমন করেন।
ওই সময় তথায় উচ্চ শিক্ষার্থী হিসেবে অবস্থানকালে হুজুর গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর সহপাঠি ছিলেন জনাব আছাদ আলী। সে হিসেবে জনাব কেবলা ও হুজুর গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর সাথে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। শিক্ষা কার্যক্রম শেষে জনাব আছাদ আলী জনাব কেবলা যখন চট্টগ্রামে পদার্পণ করেন তখন অসংখ্য আলেম ওলামা তাকে সংবর্ধনা প্রদান করেন। এমনকি তাদের মাঝে তাঁর শৈশবের অনেক বহু গুণগ্রাহীও উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে দেশে ফেরার আরো কিছুদিন পর তিনি রাঙ্গুনিয়া কাউখালীতে কাজী বা বিচারক নিযুক্ত হন।
শৈশবে লালিত খোদাপ্রেম ও আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসা দীর্ঘদিন তাঁকে একজন কাজী হিসেবে আটকে রাখতে পারেনি। জমিদারীর ভোগবিলাসী জীবনও তাঁকে কখনো হাতছানি দেয়নি। এসময় তিনি উপমহাদেশ খ্যাত মাইজভাণ্ডারী সরাফতের প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ ও গোড়াপত্তনকারী “গাউছুল আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ)” প্রকাশ হযরত কেবলার আধ্যাতিœক শিষ্যত্ব লাভ করেন। সাধনা ও রেয়াজতের সুকঠিন সোপানসমূহ পার হয়ে সিদ্ধি লাভের পর তিনি হযরত কবলা (কঃ) এর অন্যতম ‘খলিফা’ হিসেবে পরিনত হন।
জনাব কেবলা (ক.) হযরতের অন্যতম পেয়ারা ও শ্রেষ্ঠ খলিফা ছিলেন। তিনি হযরত গাউসুল আজমের সকল খোলাফায়ে কেরামের চেয়ে আধ্যাত্মিক বিষয়ে অগ্রগামী ছিলেন। কারণ, তরীকতের ছিলছিলা ও তাঁর বংশীয় শজরা উভয় ধারায় তিনি ফয়েজ প্রাপ্ত। তাঁর বংশীয় মর্যাদা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বেলায়তী মকাম ছিল অত্যন্ত উঁচু মর্যাদার।
এজন্য হযরত কেবলা তাঁ গুণগ্রাহী মুরিদান ও খোলাফায়ে কেরামকে কাজী সৈয়দ আছাদ আলী (ক.) কে সম্মানসূচক ‘জনাব’ সম্বোধন করতে নির্দেশ প্রদান করলেন এবং তিনি নিজেও ‘জনাব’ বলে সম্বোধন করতেন। জনাব কেবলা তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পন্ন করে ৬৬ বছরের বর্ণাঢ্য এক জীবন আদর্শ রেখে ১৩২৪ বাংলা সনের ২৯ বৈশাখ মোতাবেক ১৯১৭ ঈসায়ী সালের ১২ মে দুনিয়া থেকে পর্দা করেন।