১৪২৬ বঙ্গাব্দ। ঋতুচক্রের হিসাব অনুযায়ী, আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। যদিও বর্তমানে ভেঙে পড়েছে আবহাওয়া পরিস্থিতি, জলবায়ুর শৃঙ্খল। প্রকৃতির উন্মাতাল আচরণে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষার চিরাচরিত আচরণ পাল্টে গেছে। ফলে এ আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হবে কি না, হলেও সেটা ঋতুর চরিত্রের সঙ্গে সংগতি রেখে হবে কি না তা প্রশ্নসাপেক্ষ। বিগত কয়েক দিনের দুঃসহ গরমে পাল্টে দিয়েছে অনেক সমীকরণ। এ সময় আবহাওয়া মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে প্রকৃতিতে যা চলছে তা নজিরবিহীন!
বাঙালি জীবনে বর্ষা আসে অন্যরকম আবেদন নিয়ে। এর ইতিবাচক দিক অসংখ্য, আবার ভোগান্তি কিংবা দুর্দশার চিত্রও ছোট নয়। বর্ষা তথা বৃষ্টি নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক কবিতা, ছড়া ও গান। বিশেষ করে আজকের দিনের জনপ্রিয় একটি কবিতা হচ্ছে বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল/তুমি করিছ দান…। বর্ষার সঙ্গে ওতপ্রোত যোগ রয়েছে কদম ফুলের। কদম ফুলের অদ্ভুত সুন্দর মাদকতাময় গন্ধে বর্ষা পায় ভিন্নমাত্রা। কবিগুরু যতই ভয় দেখিয়ে বলেন ‘ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাইরে’ সে বাধা ডিঙিয়ে প্রেমিক বাঙালি মন ঠিকই খুঁজে নেয় কদম ফুলের ঘ্রাণ।
বর্ষায় নদ-নদী ভাসে জোয়ারে বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদেয় এলো বান। ছেলেভোলানো এ ছড়াগানের কথাগুলো যেন কথার কথায় পরিণত হচ্ছে। বর্ষা হারাচ্ছে তার চরিত্র, অন্যদিকে এতে ভাবুক বাঙালি হৃদয়ে অনুভব করছে মর্মযাতনা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে লিখেছিলেন ‘এ জলের দেশ…’। কিন্তু এখন কোথায় জল! জলই যদি না থাকে তবে কেমন দেশ! রবি ঠাকুরের লেখা ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে… আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে…।’ হায় কোথায় সেই বৃষ্টির ঘ্রাণ, কোথায় সে বর্ষাকালের প্রথম বৃষ্টি স্পর্শ করার শিরশিরে অনুভূতি! বৃষ্টিতে ভেজা বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। সেই সংস্কৃতিও ঢাকা পড়ে যাচ্ছে অনাবৃষ্টি ও প্রকৃতির খেয়ালি আচরণে।
শত প্রতিবন্ধকতার পরও বর্ষা আসবে বাঙালি জীবনে। রেখে যাবে পলি, নতুন শস্যের আবাহনে। সুজলা, সুফলা মাঠ, নদী-জলাশয় থইথই করবে বর্ষার আগমনে। আপাতত এ স্বপ্নই মনে বপন করুক প্রকৃতিপ্রেমী বাঙালি। শহরে কিংবা গ্রামে কোথাও কদম ফুটলো কি না আজ থেকেই শুরু হবে খোঁজ খোঁজ রব!