বিশেষ প্রতিবেদন
আজমির শহরটি ভারতীয় মুসলমানদের জন্য একটি অন্যতম পুণ্যভূমি । ঠিক ভারতীয় বললে অবশ্য ভুল হবে। কারন বর্তমানে এখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইসলাম ধর্মাবলম্বীসহ বিভিন্ন পুন্যার্থিদের আগমন ঘটে থাকে বিধায় এটি এখন বিশ্বজনীন তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে আছে হযরত খাজা মইনুদ্দিন হাসান চিশতী( রঃ) এর মাজার যা আজমির শরীফ হিসেবে সমধিক পরিচিত।

১৯৫০ সালে ‘ আজমির’ ভারতের একটি রাজ্য হিসেবে মর্যাদা লাভ করলেও ১৯৫৬ সালে এটি রাজস্থানের সাথে একীভূত হয়ে যায়। আজমির শহরটি রাজস্থানের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত। হযরত খাজা মইনুদ্দিন হাসান চিশতী(রঃ) ১১৪২ খ্রিস্টাব্দে ইরানে জন্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি ভারতে আগমন করেন। তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সরাসরি বংশধর। আজমির এসে ৮০০ ফুট উঁচু এক পাহাড়ের পাদদেশে তিনি আস্তানা গড়ে ধর্ম প্রচার শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর ওফাত বার্ষিকীতে আরবি রজব মাসের ১ম সপ্তাহে এখানে ঘটা করে ওরস উদযাপিত হয়। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পদচারনায় তখন মাজার এলাকাটি থাকে বেশ মুখরিত।

৬ রজব হচ্ছে ওরসের শেষ দিন। ইতিহাস থেকে জানা যায় হযরত খাজা মইনুদ্দিন হাসান চিশতী(রঃ) তাঁর জীবনের শেষ কয়েকটি দিন নির্জন কক্ষে আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থেকে ৬ রজব তারিখে ওফাত লাভ করেন। তাই এই দিনটি পুন্যার্থিদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে ওরসে আগত সবাই সুর করে হাততালি সহকারে আল্লাহ, রাসুল ও সূফী আউলিয়াদের গুণকীর্তন পূর্বক কবিতা বা কাউয়ালী পাঠ করে থাকেন এবং ফাতিহা পাঠ করা হয়। অবশেষে অপরাহ্ণ ১.৩০ ঘটিকায় কামান ফায়ারের মাধ্যমে ওরসের যবনিকাপাত ঘটে।

উল্লেখ্য, ওরস উপলক্ষে বিশেষ দোয়ার জন্য মাজার পরিচালনা কমিটি কর্তৃক দোয়া প্রার্থী মুসল্লিদের নামের লিস্ট করা হয়। যারা সশরীরে হাজির থাকতে পারেন না তারাও বিভিন্ন ভাবে অর্থ কড়ি পাঠিয়ে পুণ্য লাভ করতে পারেন। এ অর্থ দিয়ে মাজারের জন্য ফুল, ভেলভেটের চাঁদর কেনা হয়; মিসকিনদের জন্য কাঙ্গালি ভোজ কিংবা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে ডোনেটরদের জন্য দোয়া করা হয়।

লোকজন মাজারের গেটে লাল সুতা বেঁধে মানত করছে, কেউ কেউ মাজারের দেওয়ালে মাথা ঠুকে পড়ে আছে ঘন্টার পর ঘন্টা। অনেকে হাত কিংবা মাথা দিয়ে মাজারের দেওয়াল স্পর্শ করে বির বির করে মনোবাঞ্ছা পূরণের দোয়া করছে।

মাজারকে কেন্দ্র করে বিক্রি হচ্ছে ফ্লাওয়ার বাস্কেট, ভেলভেটের চাঁদর, সুগন্ধি আগরবাতি, টুপিসহ নানা রকম জামা –কাপড় আর খাবার দাবার। এখানে নিজেদের ব্যবহারের জন্য সস্তাই জামা কাপড় পাওয়া যায়।

মাজারের ভেতরে ছবি তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। নারী-পুরুষ–শিশু নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে মাজার দেখতে লাইন ধরে ঢুকছে। নিরাপত্তা রক্ষী কাউকে দাঁড়াতে দিচ্ছেনা; দেখতে হচ্ছে হেঁটে হেঁটে। বের হওয়ার সময় দুই একজনকে দেখা গেল দর্শনার্থীদের মাথায় ময়ূরের পালকের ঝাড়ু দিয়ে বাড়ি মারার বিনিময়ে রূপী নিচ্ছে।

মাজার চত্বরের এক পাশে এক দল লোক হারমোনিয়াম বাজিয়ে কাওয়ালী সঙ্গিত গাইছে উচ্চ স্বরে।

মাজারের লাগোয়া মসজিদের মিনারটা বেশ সুন্দর দেখতে। মিনারে রয়েছে নানা রকম সোনা খচিত কারুকার্য।মাজার ও এর সংলগ্ন চত্বরের দেওয়াল এবং ছাদের দৃষ্টি নন্দন কারুকাজ দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন।

মূল গেটের দিকে দুই পাশে বিশাল বড় দুইটা ডেগ রাখা।  একটাতে লোকজন টাকা ঢালছে; আরেকটাতে চাল- ডাল, খাবার –দাবার। সন্ধ্যা নাগাদ বিশাল আয়তনের এই ডেগ দু’টা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এ দরগাহ পরিচালিত হয় ভারত সরকারের খাজা বাবা অ্যাক্ট– ১৯৫৫ এর আওতায়। সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত দরগাহ কমিটি মাজারের জন্য প্রাপ্ত সকল প্রকার ডোনেশন ব্যবস্থাপনা এবং মাজার রক্ষণাবেক্ষণ সহ বিভিন্ন জনহিতকর প্রতিষ্ঠান যেমন ডিসপেনসারি, গেস্ট হাউজ ইত্যাদি পরিচালনা করে থাকেন।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here