মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বর্ষীয়ান রাজনীতিক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার (৪ নভেম্বর)।
এ উপলক্ষে আনোয়ারার হাইলধরে মরহুমের গ্রামের বাড়িতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এছাড়া খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছাড়াও জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন চারবার। নবম জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
১৯৪৫ সালে আনোয়ারা হাইলধর গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। তার পিতার নাম নুরুজ্জামান চৌধুরী। তিনি আইনজীবী ছিলেন। তার মাতার নাম খোরশেদা বেগম। ১৯৫৮ সালে পটিয়া হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ওই বছরই ঢাকা নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে পড়ার সময় তিনি বৃত্তি পেয়ে আমেরিকার ইলিনয় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ভর্তি হন। পরে তিনি নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনে পড়ালেখা করেন। সেখান থেকে এসোসিয়েট ডিগ্রি নিয়ে ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরেন। ১৯৬৫ সালে ব্যবসা শুরু করেন।
১৯৫৮ সালে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন বাবু। ১৯৬৭ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হন। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তার পাথরঘাটা জুপিটার হাউজ থেকে সংগ্রাম কমিটির কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামে আসার পর জুপিটার হাউস থেকে সাইক্লোস্টাইল করে প্রচার করা হয়। তার বাসা থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ সব জায়গায় পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভারতে যান এবং সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) হিসেবে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ১৯৭২ সালে গঠিত বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য হন এবং বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার পর ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ২০০৯ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
স্বাধীনতার পূর্বে তিনি বাটালি রোডে রয়েল ইন্ডাস্ট্রি নামে একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে আসিফ স্টিল মিল, জাভেদ স্টিল মিল, আসিফ সিনথেটিক, প্যান আম বনস্পতি, আফরোজা অয়েল মিল, বেঙ্গল সিনথেটিক প্রোডাক্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। ভ্যানগার্ড স্টিল মিল, সিনথেটিক রেজিন প্রোডাক্ট ক্রয় করে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে জামান শিল্পগোষ্ঠীর গোড়াপত্তন করেন। তিনি বিদেশি মালিকানাধীন আরামিট মিল কিনে নেন। তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) এর উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
তিনি দু’দফায় চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৮৮ সালে তিনি দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠক এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওআইসিভুক্ত দেশসমূহের চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি ৭৭ জাতি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
তিনি ব্যক্তি জীবনে ৩ পুত্র ও ৩ কন্যার জনক। বড় ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি বর্তমানে আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনের সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্বে। মেজ ছেলে আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ইসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ছোট ছেলে আসিফুজ্জামান চৌধুরী জিমিও একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ইন্তেকাল করেন।