আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না হয়, সেদিকে সজাগ থাকার জন্য প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম যেন নিরবচ্ছিন্ন ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখার কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) ৭৭তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে যোগ দিতে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে আসেন প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি নবীন ক্যাডেটদের অভিবাদন গ্রহণ করেন।
এরপর মধ্যাহ্নভোজের আগে প্রধানমন্ত্রী বিএমএ’র একটি সভাকক্ষে চট্টগ্রামের প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কথা বলেননি। তিনি মূলত প্রশাসনের কমকর্তাদের কাছে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ, মাদক-সন্ত্রাস প্রতিরোধ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান।
বৈঠকে উপস্থিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মূলত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলেননি। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। কর্মকর্তারা নিজ নিজ ডিপার্টমেন্টের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না হয়, সেদিকে সজাগ থাকার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে শুধু মামলা দায়ের করে দায়িত্ব শেষ করলে হবে না। সাক্ষীদের হাজির করে মামলার বিচার যেন দ্রুত শেষ হয় এবং অপরাধীদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সেটা করা না গেলে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বার্থে অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে।’
বৈঠকে উপস্থিত চট্টগ্রাম নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মাদক, আইনশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস মোকাবিলা নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফাঁকে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন। বন্দরের কাজ যেন নিরবচ্ছিন্ন থাকে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলে, সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমরা ডিটেইলস প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি যেন না হয়, সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে বলেছেন।’
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, ‘গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীর প্রোগ্রামে ন্যাভাল একাডেমিতে এসেছিলেন। তখন আমাদের সঙ্গে বসতে পারেননি। এবার বসেছেন। জাস্ট সৌজন্য সাক্ষাৎ। সেখানে আমাদের সঙ্গে একেবারেই ফরমাল কিছু কথা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রায় আধাঘণ্টা বৈঠক করেছেন। উনি দু’টি বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন— আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও চট্টগ্রাম বন্দর। আইনশৃঙ্খলার অবনতিটা যেন না হয়, সেজন্য প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন। আমাদের নেতাদের বলেছেন প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে। এরপর চট্টগ্রাম বন্দরে যেন কাজের গতি থাকে, কোনো ধরনের গাফিলতি যেন না হয় এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে যেন সবকিছু হয়— এসব বিষয়ে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা তিন জেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা ছিলাম। আমাদের সঙ্গে শুধু কুশল বিনিময় করেছেন।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান ও জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন এবং বিজিবিসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার চট্টগ্রামের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে ছিলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা কমিটির সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান এবং দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদও বৈঠকে ছিলেন।
ফাইল ছবি