বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ইউএসটিসি) অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে অফিস থেকে বের করে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়েছে একদল শিক্ষার্থী। মেধাবী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এর আগে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন ইউএসটিসির একদল শিক্ষার্থী । তাকে লাঞ্ছিত করার সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীরাই জড়িত বলে সন্দেহ করছে পুলিশের। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার (০২ জুলাই) দুপুরে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার পর ওই শিক্ষার্থীরাই আবার নগরীর খুলশীতে ইউএসটিসি ক্যাম্পাসের সামনে প্রায় একঘন্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা ও সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ ক্যাম্পাসে গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাবার পর শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরে গেছে। তবে ক্যাম্পাসের ভেতরে তারা মিছিল করছে বলে জানা গেছে।
নগর পুলিশের বায়েজিদ বোস্তামি জোনের সহকারি কমিশনার (এসি) পরিত্রাণ তালুকদার বলেন, অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে এর আগেও যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। গত কিছুদিন ধরে তাদের আন্দোলন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি তারা আবার মাসুদ মাহমুদের পদত্যাগ দাবিতে সরব হয়েছেন। এরপর আজ (মঙ্গলবার) তারা এই শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
ইউএসটিসি’র ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘স্যার একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় মানুষ। প্রকাশ্যে স্যারকে অফিস থেকে টেনে বের করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে অপমান করেছে। এটা চরম অপমানের। এই অপমান শুধু স্যারের নয়, আমাদের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও। আমরা স্যারের পাশে আছি। যারা শিক্ষকের গায়ে হাত দেয়, তারা কেমন ছাত্র ! আমরা পুলিশকে খবর দিয়েছি। তারা এসেছেন। তারা তদন্ত করে দেখছেন।’
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক এবং খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রনব চৌধুরী ঘটনাস্থলে গেছেন। তারা ইউএসটিসি’র উপাচার্যসহ শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।
এসি পরিত্রাণ তালুকদার জানান, শিক্ষককে লাঞ্ছনার পর শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে দিতে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে ফয়’সলেকের সামনে সড়কে অবস্থান নেন। সেখানে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় যানবাহন আটকা পড়ে দুইপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
প্রায় একঘন্টার মতো সড়ক অবরোধ ছিল বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ইংরেজি সাহিত্যের কোর্স কারিকুলামের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি কবিতা পড়াতে গিয়ে নারী-পুরুষের জৈবিক সম্পর্ক, বিভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়া, পোশাক নিয়ে ক্লাসে নিয়মিত আলোচনা করেন শিক্ষক মাসুদ মাহমুদ। সেসব বিষয়কে যৌন হয়রানি হিসেবে অভিযোগ তুলে ইউএসটিসি’র একদল শিক্ষার্থী গত এপ্রিলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন।
তবে মাসুদ মাহমুদের দাবি- ইংরেজি বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কয়েকজন শিক্ষককে চাকুরিচ্যুত করেন। এরপর তাদের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের একাংশ তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলতে থাকেন।
অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ ইউএসটিসি’র ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত আছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরের পর তিনি ইউএসটিসিতে যোগ দেন।