তাদের প্রেমের সম্পর্ক ৮ বছরের। এর মাঝে নিপার পারিবারিক বিয়েতে হঠাৎ এ প্রেমের ছন্দপতন ঘটে! পারিবারিকভাবে ফাতেমা আক্তার নিপার সঙ্গে বিয়ে হয় কুয়েত প্রবাসী এক যুবকের। প্রেমে ব্যর্থ বাবু নামের ওই প্রেমিকও পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে। এদিকে নিপার সংসারে আসে অয়ন ও রিমি নামে দুই সন্তান। কিন্তু নিপা ও বাবুর সেই পুরনো প্রেম থেমে ছিলো না।

ইমু নামক এপসটি ছিলো তাদের প্রেমের সুতো। তারই জেরে ২ সন্তানের জননী প্রেমিকা নিপার টানে মরুর দেশ থেকে গোপনে দেশে ফেরেন প্রেমিক বাবু। আর প্রেমিক বাবুর টানে সংসারের মায়া ছিন্ন করে দুই সন্তানকে নিয়ে উধাও হয়েছিলেন নিপা।

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকা থেকে সিএনজি নিয়ে উধাও দুই সন্তানসহ এক নারীর নিখোঁজ রহস্যের পেছনের কাহিনী ছিলো এমনই।

পরিবারের পক্ষ থেকে ফাতেমা আক্তার নিপা (২৪), ছেলে আদনান সাইদ অয়ন ( ৪) ও মেয়ে ফাহমিদা জাহান রিমিকে (২) সিএনজি অটোরিকশাচালক অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছিল থানায়। তবে কাউন্টার টেররিজম চট্টগ্রামের একটি দল এর রহস্য উদঘাটনে নেমে আবিস্কার করেন- অপহরণ নয়, পরকীয়ার টানেই স্বেচ্ছায় দুই সন্তানসহ নিখোঁজ হয়েছিলেন নীপা।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর কুয়েত প্রবাসী বাসিন্দা ফখরুদ্দিন রুবেলের স্ত্রী নিপা তার ৮ বছরের প্রেমিক সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারির বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী বাবুর সঙ্গেই পালিয়েছিলেন। পালিয়ে তারা গত ৭দিন ঢাকার সাভারে বাস করছিলেন। তবে তদন্তের নানা ধাপ পেরিয়ে দুই সন্তানসহ কাউন্টার টেররিজমের কার্যালয় ও চান্দগাঁও থানা ঘুরে ফাতেমা আক্তার নিপা এখন পৌঁছুলেন নিজ পিতৃগৃহে।

কাউন্টার টেররিজম চট্টগ্রামের প্রধান উপ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘সিএনজি অটোরিকশা করে গত ১১ নভেম্বর আমানবাজার থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথায় এলে পাঁচ মিনিটের মাথায় সিএনজিচালক ফাতেমা আক্তার নিপা (২৪), ছেলে আদনান সাইদ অয়ন ( ৪) ও মেয়ে ফাহমিদা জাহান রিমি (২) কে নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাচালক গাড়ি ঘুরিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়—এমন অভিযোগ ছিল পরিবারের। তদন্তে নেমে দুই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি রাস্তার মাথার সব সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। অনেক চেষ্টার পর কয়েক ঘণ্টার ফুটেজ থেকে দুটি সিএনজি অটোরিকশাকে সন্দেহ করা হয়। পরে সেই দুই সিএনজি অটোরিকশা চালককেও আটক করা হয়। এরমধ্যে হালিশহরের বাসিন্দা এক চালক নিশ্চিত করেন তিনিই ছিলেন ওই দিনের সেই সিএনজি অটোরিকশা চালক।’

সিএনজি অটোরিকশা চালকের বরাত দিয়ে উপ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমানবাজার থেকে যখন বোয়ালখালীর উদ্দেশ্যে কাপ্তাই রাস্তার মাথায় পৌঁছে সিএনজি অটোরিকশা। চালককে সেখানে থামাতে বলেন নিপা। তিনি দুই সন্তান নিয়ে গাড়িতে বসে থাকলেও তার মাকে বলেন ভ্যানগাড়িতে থাকা কাপড় কিনতে যেতে। এরই মাঝে নিপা চালককে বলেন তাদের দ্রুত নগরীর শিল্পকলা একাডেমিতে নিয়ে যেতে। এ সময় সিএনজি অটোরিকশা চালক অপর যাত্রী তার মাকে ছাড়া যেতে আপত্তি জানান। তখন নিপা বলেন মোাবাইলে কল করে তার মাকে জানাবেন, জরুরি কাজে শিল্পকলায় যেতে হচ্ছে। সেই কথা বলে একই সিএনজি অটোরিকশা করে নিপা সন্তানদের নিয়ে শিল্পকলায় চলে যান।’

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এ ঘটনায় যখন থানায় অভিযোগ হয় তখন আমরা সিরিয়াসলি তদন্তে নামি। প্রথমে কাপ্তাই রাস্তার মাথার সব সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করি, তা পর্যালোচনা করি। সেখান থেকে দুটি সিএনজি চিহ্নিত করি। পাশাপাশি দুই পরিবারের সব সদস্যদের সঙ্গে কথা বলি। আশপাশের আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলে একটা ধারণা পাই। তদন্তে জানতে পারি এটা অপহরণ নয়, স্বেচ্ছায় নিখোঁজ। তদন্তে নাম আসে ভাটিয়ারীর বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী বাবু নামে একজনের। বাবুর সঙ্গে নিপার গত ৮ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। নিপার পারিবারিকভাবে বোয়ালখালীতে বিয়ে হলেও তাদের মধ্যে ইমোতে নিয়মিত যোগাযোগ হত। যেদিন নিপা নিখোঁজ হন সেদিনই দুবাই থেকে বাবু চট্টগ্রামে আসেন। যা বাবু তার পরিবারকেও জানাননি। বিমানবন্দর থেকে সোজা দামপাড়া আসেন। সেখান থেকে হান্ডি রেস্টুরেন্টে খাওয়া শেষে সোহাগ পরিবহনের বাসে চড়ে ঢাকার সাভারের বাবুর এক বন্ধুর বাসায় উঠেন এই প্রেমিকযুগল। তবে আমাদের জালে তাদের ধরা পড়তেই হলো।’

আইনগত করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রেমের সম্পর্কের জেরে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়েছেন তারা। তাই এখানে বাবুরও কোনও দোষ নেই। আর তাকেও আমরা পাইনি। বাবুর পরিবারকে চাপ দিলে বাবুর পরিবারই নিপাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর নিপা ও দুই সন্তনকে চান্দগাঁও থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ফাতেমা আক্তার নিপার পরিবারের জিম্মায় তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে। কেননা এই ঘটনায় অভিযোগ নিলে কোনও মামলা হয়নি।’

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here