মুহম্মদ হেলাল উদ্দিন
সব অপরাধের পিছনে অবশ্যই কারো না কারো দায়িত্বের দূর্বলতা কাজ করে। সম্পত্তি বিরোধসহ খুন খারাবির মত ঘটনা হঠাৎ করে ঘটে না। দীর্ঘ সময়ের বঞ্চনা,অবহেলা,দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন আচরণ এসব ঘটনা ত্বরান্বিত করে।যতটা না সামাজিক দায়বোধ,তার চেয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই এসব অপরাধকে আস্কারা দেয়।
অপরাধ প্রতিরোধ করাই প্রধান ও মৌলিক কাজ।প্রতিরোধ করতে না পারলে বা না করলে সেটির দায় একমাত্র দায়িত্বশীলদেরই নিতে হবে।বিরোধীয় ও বিবেচনাধীন বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে অন্য কোন ঘটনা ঘটে যাওয়ার দায়ভার অবশ্যই দায়িত্বশীলকে নিতে হবে।আপনি যতই যুক্তি দেন,এর দায় দায়িত্বশীলদের।
যদি প্রশ্ন করা হয়,এমন ঘটনা ঘটে কেন?
সহজ উত্তর,দায়িত্বশীল ব্যক্তি তার দায়িত্ব পালন না করাতে এমন ঘটনা ঘটে।
অবাক করা বিষয়,প্রায় ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করেনই না,বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্য ধান্ধায় লিপ্ত হতে দেখি।এখানে ব্যবসা করার ক্ষেত্রও তৈরী করতে দেখা যায়।তখন তাকে দায়িত্বশীল না বলে ধান্ধাবাজ ব্যবসায়ী বা রাষ্ট্রের শত্রু বললে অবশ্যই বাড়িয়ে বলা হবে না।
লোভের কারণে অপরাধী তার অপরাধ কর্ম করার উৎসাহ পায়।এই লোভটাই নির্মূল করার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয় না।সঠিক সময়ে প্রতিরোধের ব্যবস্হা নেয়া হলে অপরাধ ঘটা প্রায় অসম্ভব।
অপরাধ বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয় মতে,অপরাধী একটি অপরাধ করে যে সুখ(মানসিক বা আর্থিক) পায় শাস্তিটা প্রাপ্ত সুখের চেয়ে বেশি হলে সে পূণরায় অপরাধ করতে আগ্রহ হারিয়ে পেলে।বিপরীতে অপরাধ করতেই থাকে,ঠেকানো অসম্ভব।অপরাধীকে শাস্তি দেয়া অনেক পরের বিষয়।এখানে বিভিন্ন অনুষঙ্গেরর কারণে এটি বিলম্ব বা অসম্ভব বলেই প্রতিরোধের দিকে নজর দেয়া অতি আবশ্যক।
প্রশ্ন হচ্ছে,এর দায়িত্ব নিবে কে?
দায়িত্ব কাউকে নিতে হবে না।দায়িত্ব যার কাছে আছে সে তা পালন করলেই হবে।মূল কথা হলো,দায়িত্বশীল ব্যক্তি তার দায়িত্ব পালন করে না,অনেক ক্ষেত্রে সে জানেইনা তার দায়িত্ব কি।প্রশ্ন জাগতে পারে,যে জানেইনা তার দায়িত্ব কি সে কিভাবে দায়িত্বশীল হয়।হু,তিনিও দায়িত্বশীল।এটার জন্য ব্যবস্হা দায়ি।
ব্যবস্হা কি জিনিস?
এটার বর্ণনা দিয়ে আপনার বা আমার মাথা নষ্ট করার ইচ্ছা আমার নাই।আপাতত এটা জানুন,এটার জন্য ‘আমি’ দায়ি।এটাই ব্যবস্হা।
বিবেচনাধীন থাকা অবস্হায় অবস্হার অবনতি হওয়া মানেই ‘কর্তাব্যক্তি’ দায়ি।দায়ি তার অযোগ্যতা।অযোগ্যতা কোন সুযোগ নয়।এটা সমগ্র ব্যবস্হার বড় একটি পরিপূরক অংশীদার।
পেশি শক্তি যখন দূর্বলের অত্যাচারে ব্যবহৃত হয় তখন দূর্বল হয় নিঃশেষ হয়ে যায়, নয়তো বিপ্লবি হয়ে ওঠে।এই বিপ্লবি হয়ে ওঠার রাস্তা প্রায় সময় সুখকর হয় না।মাঝে মধ্যে এটি ভয়ংকর অভিজ্ঞতা বয়ে নিয়ে আসে।তারা জিতলেও খুব কম পরিসরে বীর হয়,বিস্তৃত পরিসরে হয় সন্ত্রাসী।এটি মাথায় না ধরলে শুধু এটিই জানুন,এর নাম ব্যবস্হা।
ক্ষতিগ্রস্হ ব্যক্তি যখন বঞ্চনার শিকার হয়,যখন ন্যায় বিচার পায় না তখন সে ইতিহাস তার মনের গহীনে লুকিয়ে রাখে।সময় আর সুযোগ পেলেই সে কামড় বসিয়ে দেয়,শক্ত কামড়।বুদ্ধিমানরা এটি কৌশলে করে,মানসিক যন্ত্রনা দিয়ে।অন্যরা নিউটনের তৃতীয় সূত্র প্রয়োগ করে।এটি সমাজের জন্য ভয়ংকর।তবে,এটি নিবৃত করা প্রায় অসম্ভব।সেজন্যই প্রথম অপরাধ প্রতিরোধ করা আবশ্যক।
দায়িত্বশীলরা দায়িত্বশীল পদে থেকে গ্রহীতার ন্যায্য পাওনা দেয়ার বিনিময়ে ঘোষ দাবি করলে এবং ঘোষ নিয়ে তার ‘দায়িত্ব’ পালন করলে গ্রহীতা কখনই এটি মনের দৃষ্টিতে দেখে না।এটি তিনি আজীবন ধারণ করেন।আবার সেই দায়িত্বশীল ব্যক্তি যদি দশজনের সামনে নৈতিকতার কথা প্রচার করে বা সামগ্রীক কল্যাণে অবদান রাখার জন্য নিজেকে সমর্পণ করার কথা বলে তখন সেটি হাস্যরসের সৃষ্টি করে।প্রায় সময় মানুষ এটি প্রকাশ্যে না বললেও গুণগুণ করতে শুনা যায়।প্রকাশ্যে বলুক বা গুণগুণ করুক এদের দিয়ে অপরাধ ছাড়া সমাজে অন্যকিছু হওয়া সম্ভব নয়।এই অপরাধ হলো জঘন্যতম। অপরাধ বিজ্ঞান এটিকে ‘হোয়াইট কলার’ অপরাধ নামে চিহ্নিত করে।আর, এরা ‘হোয়াইট কলার’অপরাধী।মানেটা খুব সহজ,সূর্যের সব আলোকরশ্মি শোষন করতে সক্ষম ধবধবে সাদা শার্টটি একটানা একশত ছাব্বিশ ঘন্টা পরলেও শার্টের কলারে কোন দাগ না লাগার(!) মতই।
অনৈতিক সুবিধা দাবি করে না পেলে অনেকে আবার বেপরোয়া হয়ে ওঠে।তারা অনৈতিক সুবিধা ভোগ করতে করতে এটিকে তাদের ন্যায্য পাওনা মনে করে।না পেলেই মাথা ঠিক রাখতে পারে না।নিউরণের সংকেতে অসংলগ্ন আচরণ করে। তখন অন্য রাস্তায় অনৈতিকতার খোঁজ করে।শেষ পর্যন্ত তারা লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।যেতে না পারলেও বাধাদানকারীকে হেনস্তা করে ছাড়ে।এটিও শেষে অপরাধের দিকেই অগ্রসর হয়।
অপরাধী যখন অপরাধ করে তখন সে মানুষ থাকে না,’মানুষ’ হয়ে যায় ক্ষণিকের জন্য।সে সমাজের ব্যবস্হার প্রতি আস্হাশীল থাকে না।এখানে আস্হার সংকট প্রকট।এটি পূরণ করতে না পারলে অপরাধ প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব।
প্রশ্ন হলো,এটি কার দায়িত্ব?
এ দায়িত্ব সকলের,বিশেষত যারা সমাজের অংশ দাবি করি।কেউ সমাজের অংশের বাইরে দাবি করলে তিনি দায়মুক্তি পাবেন,তবে রেহাই পাবেন না।অপরাধ মন বড়ই অনুকরণপ্রিয়।এটি বংশগতির মতই চলতে থাকে।বংশ পরম্পরায় এটি নিকট বংশে বা তার পরবর্তী বংশে নিজেকে প্রকাশ করে।ব্যবস্হা এখানে অনেকাংশেই দায়ি।এটি প্রত্যাখানের সুযোগ নাই।
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আত্মাহুতির ঘটনাও ঘটে।এই আত্মাহুতির বিচারের শেষ বিন্দু দেখা যায় না।এটি হলে অপরাধ কিছুটা কমত।বিচার দাবি না করেই বিচার পেলে ক্ষতিগ্রস্হ ব্যক্তির মনোবল বাড়ত।ব্যবস্হার প্রতি আস্হা বাড়ত।অপরাধ অবশ্যই বাধা পেত।এটি প্রয়োজন।মৌলিক অধিকার ভোগ করতে বাধা দিলে অপরাধ মন জেগে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল থাকে।
অন্য আরো অনেক কারণ আছে।
করোনাময় এই দূর্যোগে অপরাধ থেমে নেই। সকল খুনের তীব্র প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানাই।বিচার দাবি করব না। এটি আমার অধিকার।
–মুহম্মদ হেলাল উদ্দিন. ওসি(তদন্ত), জোরারগঞ্জ থানা, মিরসরাই।