অগ্নিস্নানে চিরনিশ্চুপ বাবুল আচার্য
সুদর্শন চক্রবর্তী
আলোকিত বোয়ালখালীর সম্পাদক, সুপ্রিয় রাজু ভাই ফোনে জানালেন বাবুল আচার্য প্রয়াত। শেষকৃত্যে অংশ গ্রহণ শেষে রাজু ভাই শহরে এসে এই শোক সংবাদ জানানোর পর বিস্মিত হলাম। স্মৃতির পর্দায় যেন হঠাৎ কষ্টের আঘাত। বাস্তব সত্যের দহনকে মেনে নিতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। কানুনগোপাড়ার সে-ই বসন্ত উৎসব, অরুন আলোয় আঁকা বাবুলদা’র কত স্মৃতি মুহুর্তেই যেন স্মরণের মঞ্চে বেদনার সুর হয়ে বেজে উঠল।
সংগীতের ভুবন থেকে প্রতিভাবান একজন সংগীত ব্যক্তিত্ব অসময়ে হারিয়ে গেলো। গীতিকার, সুরকার, গায়ক, সাংস্কৃতিক সংগঠক বাবুলদা আজ অন্তরালে, ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ভাঙবে না তাঁর স্বপ্ন ঘুম। দীর্ঘ সময়ের সখ্যতায় আমি দেখেছি তাঁর নির্মোহ ভাব, আন্তরিকতার ব্যঞ্জনা, সাদা মাটা জীবন চলা। অবিমিশ্র ভালবাসায় সবাইকে মুগ্ধ করতেন। অনেক ত্যাগ, অনেক না-পাওয়ার নীরব বেদনা থাকার পরও হাসিমুখে পান চিবোতে চিবোতে সবকিছুকে সহজ ভাবে মেনে নিতেন। ভাবতে অবাক লাগে তাৎক্ষণিক গান লিখে তাৎক্ষণিক সুর করার এমন বিরল প্রতিভা আমার সাংস্কৃতিক পথ চলায় দ্বিতীয়টি দেখিনি।
আমার বহু নাটকের সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি। আমার বাড়িতে কত নিদ্রাহীন রাত একসঙ্গে কাটিয়েছি। মুখে পান, খাতায় লিখে চলেছেন গান। সঙ্গে সুর। ভোরের আলো দেখা দিলে ঘুমিয়ে পড়তেন। তেমন কোনো চাহিদা ছিলো না তাঁর। সস্তা খ্যাতি, গৌরবলোভী, তোষামোদকারীতা ইত্যাদি আ-মরি চাহিদার ঊর্ধ্বে ছিলেন তিনি। সাংস্কতিক কাজে কখনো কাউকে ‘না’ বলেছেন বলে আমার মনে হয় না। শরতের শান্তির সকালে বাবুলদা’র শবদাহ হয়ে গেল। বেঁচে থাকতে কত প্রশংসা-হাততালি পেয়েছে কিন্তু জীবনের অপরা বেলায় রিক্ততা ও নিঃস্বতায় আর্থিক দৈন্যতায় ধুঁকে ধুঁকে চলে গেলেন এই শিল্পী। এটা কি নিয়তি নাকি আমাদের নৈতিক বা হার্দিক নিঃস্বতা যে শিল্পী বা সাহিত্যিক বা গুণী কোনো জনের জীবনের শেষ বিকেলে আমাদের উদার স্পর্শ কোথায় যেন মুখ লুকায়।
নিজেই নিজের কাছে লজ্জিত হই এই গুণী মানুষটির যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারিনি। আশায় যেন থেকে গেছে আশাহীনতার আশাহীনতার দীর্ঘ নিঃশ্বাস। বর্তমান দেয়া-নেয়ার হিসেব নিকেশের সময়ে বাবুলদা’র মতো নিঃস্বার্থ সৃজনিক মুগ্ধতার সংগীতজ্ঞ পাবো কিনা জানি না। তাঁর রচিত কোনো সৃষ্টি সম্ভার যদি পরিবারে সংরক্ষিত থাকে তাহলে পরিবার সহ সকল বাবুলপ্রেমীদের কাছে সবিনয়ে আহ্বান জানাবো এগুলো প্রকাশের মাধ্যেমে অশরীরী বাবুলদাকে স্মৃতিময় করে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াসে এগিয়ে আসতে। যেখানে আমিও একজন সাধারণ কর্মী হয়ে থাকবো।
বিদেহী বাবুলদা’র আত্মার শান্তি কামনা করে বলি:
নিশ্চুপ তুমি হে বন্ধু, সুরেলা কন্ঠে আর গাইবে না
সৃজন উল্লাসের উপমা তুমি, তোমার কীর্তি ভুলবো না।
তারিখ-২৬-০৮-২০১৯
লেখক – সাহিত্য ও সংস্কতি সমীক্ষক